দেউলিয়া বিষয়ক আইন, ১৯৯৭
( ১৯৯৭ সনের ১০ নং আইন )
[১১ মার্চ, ১৯৯৭]
দেউলিয়াত্ব বিষয়ক বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন৷
যেহেতু দেউলিয়াত্ব বিষয়ক বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেইহেতু নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
সংক্ষিপ্ত শিরোনামা ও প্রবর্তন
১৷ (১) এই আইন দেউলিয়া বিষয়ক আইন, ১৯৯৭ নামে অভিহিত হইবে৷
(২) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৯৭ এর মধ্যে যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে ইহা বলবত্ হইবে৷
সংজ্ঞা
২৷ বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-
(১) “অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি” অর্থ কোন একক দেনাদারের এমন সম্পত্তি যাহা ধারা ৩২ এর বিধান মোতাবেক অব্যাহতিপ্রাপ্ত;
(২) “আর্জি” অর্থ দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ধারা ১০ এর অধীনে দাখিলকৃত কোন আবেদনপত্র, এবং “আর্জিকারী” অর্থ যে ব্যক্তি আর্জি দাখিল করেন;
(৩) “আদালত” অর্থ ধারা ৪(৩) এ সংজ্ঞায়িত দেউলিয়া বিষয়ক আদালত;
(৪) “আনুষ্ঠানিক দাবীনামা” অর্থ ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১)(ঝ) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, একই ধারার উপ-ধারা (২) এর বিধান মোতাবেক নির্ধারিত ফরমে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে জারীকৃত কোন দাবীনামা;
(৫) “আপীল” অর্থ ধারা ৯৬ এর অধীনে দায়েরকৃত আপীল;
(৬) “আপীল আদালত” অর্থ বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ;
(৭) “আপোষ মীমাংসা” অর্থ ধারা ৪৩ এর অধীনে প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত কোন আপোষ মীমাংসা;
(৮) “একক ব্যক্তি” অর্থ প্রাকৃতিক সত্তা বিশিষ্ট কোন ব্যক্তি এবং “একক দেনাদার” অর্থ এমন একজন দেনাদার যিনি একক ব্যক্তি;
(৯) “ক্রোক” অর্থ ধারা ১০১ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে এই আইনের কোন বিধান অনুসরণ বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নযোগ্য কোন ক্রোক;
(১০) “ঘোষণাদেশ” বা “দেউলিয়া ঘোষণাদেশ” অর্থ ধারা ১০ এর অধীনে কোন ব্যক্তিকে দেউলিয়া ঘোষণা করিয়া প্রদত্ত কোন আদেশ;
(১১) “জেলা আদালত” অর্থ কোন জেলার উপর আদি এখ্তিয়ারসম্পন্ন প্রধান দেওয়ানী আদালত;
(১২) “তফসিল” অর্থ ধারা ৩৮(১) এর অধীনে প্রণীত তফসিল;
(১৩) “দণ্ডবিধি” অর্থ Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860);
(১৪) “দাবী” অর্থ যে কোন প্রকারের বা প্রকৃতির দাবী যাহা অর্থ দ্বারা পরিমাণযোগ্য;
(১৫) “দায়গ্রস্ত দেউলিয়া” অর্থ কোন একক দেউলিয়া যাহার ব্যাপারে এই আইনের পঞ্চম অধ্যায়ের বিধান মোতাবেক দায়মুক্তির আদেশ প্রদান করা হয় নাই;
(১৬) “দায়মুক্তি” অর্থ এমন একটি অবস্থা যখন কোন একক দেউলিয়ার ব্যাপারে এই আইনের পঞ্চম অধ্যায়ের বিধান মোতাবেক প্রদত্ত দায়মুক্তি আদেশের ফলে তিনি ৩৯ ধারার অধীনে তাহার বিরুদ্ধে প্রমাণযোগ্য দেনার দায়-দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লাভ করেন;
(১৭) “দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” অর্থ ধারা ২৪ (১)(ক) এর অধীনে মনোনীত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;
(১৮) “দেউলিয়া” অর্থ ধারা ১০ বা ধারা ৪৫ বা ধারা ৪৬(১৩) এর অধীনে দেউলিয়া হিসাবে ঘোষিত কোন দেনাদার;
(১৯) “দেউলিয়া কর্ম” অর্থ ধারা ৯ এ উল্লিখিত কোন দেউলিয়া কর্ম;
(২০) “দেওয়ানী কার্যবিধি” অর্থ Code of Civil Procedure, 1908 (Act V of 1908);
(২১) “ধারা” অর্থ এই আইনের কোন ধারা বা দেওয়ানী-কার্যবিধি বা ফৌজদারী-কার্যবিধি এর কোন section;
(২২) “নির্ধারিত” অর্থ এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত;
(২৩) “ডিক্রী” অর্থ দেওয়ানী কার্যবিধির ২(২) ধারায় সংজ্ঞায়িত decree;
(২৪) “পাওনাদার কমিটি” অর্থ ধারা ৩৬(১) বা ধারা ৪৬ (১১) (ছ) এর অধীনে গঠিত কোন পাওনাদার কমিটি;
(২৫) “পুনর্গঠন” অর্থ ধারা ৪৬ এর অধীনে যথাযোগ্য দেনাদারের দেনার ব্যাপারে প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত পুনর্গঠন;
(২৬) “পুনর্বিন্যাস” অর্থ কোন দেনাদারের বিষয়াদির ব্যাপারে ধারা ৪৩ এর অধীনে প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত পুনর্বিন্যাস;
(২৭) “পুনরীক্ষণ” অর্থ ধারা ৯৯ এর অধীন পুনরীক্ষণ;
(২৮) “প্রতিনিধি” অর্থে কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(২৯) “প্রমাণযোগ্য দেনা” অর্থ ধারা ৩৯ এর অধীনে দেনাদারের বিরুদ্ধে প্রমাণযোগ্য কোন দেনা;
(৩০) “প্রশাসনিক ব্যয়” অর্থ এই আইনের বিধান অনুসারে রিসিভারের প্রাপ্য ফিস ও বন্টনযোগ্য সম্পদের ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, বিক্রয় বা বিলি-বন্টন বাবদ ব্যয়সহ দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পরে উক্ত সম্পদের বিরুদ্ধে উদ্ভূত কোন দাবী পরিশোধের ব্যয়;
(৩১) “ফৌজদারী কার্যবিধি” অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898);
(৩২) “বণ্টনযোগ্য অংশ” বা “বণ্টিত অংশ” অর্থ বণ্টনযোগ্য সম্পদ হইতে পাওনাদারগণের নিকট বণ্টনের উদ্দেশ্যে ধারা ৭৬ হইতে ৭৯ এর বিধান মোতাবেক নির্ধারিত অংশ;
(৩৩) “বণ্টনযোগ্য সম্পদ” অর্থ ধারা ৩১(২) এ উল্লিখিত বণ্টনযোগ্য সম্পদ এবং এই আইনের অন্যান্য বিধান অনুসারে বণ্টনযোগ্য সম্পদের অংশরূপে অন্তর্ভুক্ত হয় এইরূপ কোন বিষয় সম্পত্তি;
(৩৪) “বিধি” অর্থ এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি;
(৩৫) “বিশেষ ব্যবস্থাপক” অর্থ ধারা ৪৬ এর উপ-ধারা (৮) বা (৯) এ উল্লিখিত বিশেষ ব্যবস্থাপক;
(৩৬) “ব্যক্তি” অর্থ কোম্পানী, সংবিধিবদ্ধ বা অন্যবিধি সংস্থা, সমিতি ও অংশীদারী কারবার (partnership firm) অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৩৭) “ব্যাংক ঋণ” অর্থ ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪ নং আইন) এর অধীন কোন ব্যাংক কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ২৭ নং আইন) এর ধারা ২(ঞ) তে সংজ্ঞায়িত কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ বা আর্থিক সুবিধা, যাহা দাবী হিসাবে গণ্য হইতে পারে;
(৩৮) “যথাযোগ্য দেনাদার” অর্থ এমন একজন দেনাদার যিনি একক ব্যক্তি নহেন;
(৩৯) “যথাযোগ্য পাওনাদার” অর্থ এমন পাওনাদার, যিনি একক বা যাহারা যৌথভাবে অন্তত: ৫,০০,০০০.০০ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ দেনার দাবীতে দেনাদারের নিকট ৯(১) ধারার (ঝ) দফা অনুসারে আনুষ্ঠানিক দাবীনামা প্রেরণ করিয়াছেন;
(৪০) “রিসিভার” অর্থ ধারা ৬৪ এর অধীনে নিযুক্ত অন্তর্বর্তী রিসিভার এবং ২৩(১) ধারা বা ৪৬(৩) ধারার অধীনে নিযুক্ত অন্তর্বর্তী রিসিভার এবং ৭৪ ধারার অধীনে নিযুক্ত সরকারী রিসিভারও অন্তর্ভুক্ত হইবেন৷
(৪১) “দেনাদারের সম্পত্তি” অর্থ দেনাদারের নিজ নামে এবং বেনামীতে তাহার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও অন্য কোন ব্যক্তির নামে রক্ষিত সম্পত্তি৷
অন্যান্য আইনের প্রয়োগ
৩৷ এই আইনে ভিন্নরূপ বিধান না থাকিলে, ইহার বিধানাবলী আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনের ক্ষুণ্নকারী হইবে না, বরং অতিরিক্ত হইবে৷
দ্বিতীয় অধ্যায়
আদালতের গঠন, ক্ষমতা ও পদ্ধতি
দেউলিয়া বিষয়ক আদালত
৪৷ (১) এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, জেলা আদালত হইতে এই আইনের অধীন এখ্তিয়ারসম্পন্ন আদালত এবং উক্ত আদালতের এখ্তিয়ারাধীন এলাকায় এই আইনের অধীন উদ্ভূত কার্যধারাসমূহের বিচার ও নিষ্পত্তিকারী বিচারক হইবেন জেলাজজ৷
(২) জেলাজজ তাঁহার জজশীপে কর্মরত যেকোন অতিরিক্ত জেলাজজকে এই আইনের অধীন কার্যধারার বিচার ও নিষ্পত্তি করিবার ক্ষমতা প্রদান করিতে পারেন৷
(৩) উপ-ধারা (১) এবং (২) এ উল্লিখিত জজের আদালত, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে দেউলিয়া বিষয়ক আদালত বলিয়া অভিহিত হইবে৷
দেউলিয়া বিষয়ক সকল প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের ক্ষমতা
৫৷ (১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, দেউলিয়া বিষয়ক কোন কার্যধারায় উত্থাপিত যেকোন ধরনের প্রশ্ন, স্বত্ব বা অগ্রাধিকার সংক্রান্তই হউক অথবা আইনগত বা ঘটনাগত বা অন্য যে কোন ধরনের হউক না কেন, যাহা আদালতের গোচরীভূত হয় বা যাহা উক্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ ন্যায় বিচার বা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ বণ্টনের উদ্দেশ্যে নিষ্পত্তি করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় বলিয়া আদালত মনে করে সেইরূপ সকল প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতা আদালতের থাকিবে৷
(২) আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনে যাহা কিছু থাকুক না কেন, আদালতের প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, একদিকে দেনাদার তথা তাহার বণ্টনযোগ্য সম্পদ (Estate) এবং অপরদিকে তাহার বিরুদ্ধে বা বণ্টনযোগ্য সম্পদের উপর দাবী উত্থাপনকারী সকল ব্যক্তি বা এইরূপ ব্যক্তিগণের এক বা একাধিকের মাধ্যমে বা অধীনে দাবী উত্থাপনকারী সকল ব্যক্তির মধ্যে সকল বিষয়ে চূড়ান্ত হইবে এবং তদনুসারে তাহাদের সকলের উপর বাধ্যতামূলক হইবে৷
(৩) যেক্ষেত্রে আদালত মনে করে যে, উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত প্রদান করা সমীচীন বা প্রয়োজনীয় নহে কিন্তু কোন সম্পত্তিতে দেনাদারের বিক্রয়যোগ্য স্বার্থ রহিয়াছে বলিয়া বিশ্বাস করার কারণ আছে, সেইক্ষেত্রে, অধিকতর তদন্ত ব্যতিরেকে আদালত উক্ত স্বার্থ, উহার মতে উপযুক্ত পদ্ধতি ও শর্তাধীনে, বিক্রয় করিতে পারিবে৷
আদালতের সাধারণ ক্ষমতা
৬৷ আদালত উহার আদি দেওয়ানী এখ্তিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারে, সেই একইরূপ ক্ষমতা এই আইনের অধীন যেকোন কার্যধারার ক্ষেত্রে, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, প্রয়োগ করিতে পারিবে৷
আদালতের বিশেষ ক্ষমতা
৭৷ (১) যেক্ষেত্রে আদালত প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশ পালনে বা এই আইনের অধীনে অর্পিত ক্ষমতাবলে রিসিভার বা আদালতের অন্য কোন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ বা নির্দেশ পালনে কোন দেনাদার বা অন্য কোন ব্যক্তি ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে আদালত, নিজ উদ্যোগে বা রিসিভার বা উক্ত অন্য কর্মকর্তার আবেদনক্রমে, উক্ত ব্যর্থ দেনাদার বা ব্যর্থ ব্যক্তিকে উক্ত আদেশ বা নির্দেশ পালনের আদেশ দিতে পারিবে, অথবা সংগত কারণ থাকিলে উক্ত ব্যর্থ দেনাদার বা ব্যর্থ ব্যক্তিকে আদালত নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ও শর্তাধীনে দেওয়ানী কারাগারে সোপর্দ করিবার আদেশ দিতে পারিবে৷
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে উক্ত ব্যর্থতার ব্যাপারে কোন ব্যক্তির অন্য কোন অধিকার বা প্রতিকার ক্ষুণ্ন হইবেনা, বরং উক্ত ক্ষমতা উক্তরূপ অধিকার বা প্রতিকারের অতিরিক্ত গণ্য হইবেন৷
আদালত কর্তৃক অনুসরণীয় পদ্ধতি
৮৷ (১) এই আইনের দ্বারা বা অধীনে ভিন্নরূপ কোন স্পষ্ট বিধান করা না হইলে, দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ১১ এর বিধান ব্যতীত অন্য কোন বিধান আদালতের কোন কার্যধারার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না৷
(২) এই আইনের অধীন সকল কার্যধারায় আদালত এই আইন এবং বিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করিবে৷
তৃতীয় অধ্যায়
দেউলিয়া কর্ম, আর্র্জ, ঘোষনাদেশ ইত্যাদি দেউলিয়া
দেউলিয়া কর্ম
৯৷ (১) কোন দেনাদারের নিম্্নবর্ণিত যেকোন একটি কাজই হইবে দেউলিয়া কর্ম, যথা :-
(ক) যদি তিনি বাংলাদেশ বা অন্যত্র তাহার এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র, কন্যার নামে বেনামীতে রক্ষিত সকল বা প্রায় সকল সম্পত্তি সাধারণভাবে তাহার পাওনাদারগণের সুবিধার্থে কোন তৃতীয় ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করেন৷
(খ) যদি তিনি তাহার পাওনাদারগণের দাবী ব্যর্থ বা বিলম্বিত করিবার উদ্দেশ্যে তাহার এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র, কন্যার নামে বেনামীতে রক্ষিত সম্পত্তি বা উহার কোন অংশ বাংলাদেশে বা অন্যত্র হস্তান্তর করেন;
ব্যাখ্যা৷- যদি কোন ব্যক্তি তাহার দেনা পরিশোধে অক্ষম থাকা অবস্থায় যুক্তিসংগত মূল্য ব্যতিরেকে তাহার সম্পত্তি বা উহার কোন অংশ হস্তান্তর করেন, তাহা হইলে তিনি তাহার পাওনাদারগণের দাবী ব্যর্থ বা বিলম্বিত করিবার উদ্দেশ্যে উক্ত হস্তান্তর করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন;
(গ) যদি তিনি তাহার সম্পত্তি বা উহার কোন অংশ বাংলাদেশে বা অন্যত্র এইরূপে হস্তান্তর করেন বা বন্ধক দেন বা দায়বদ্ধ বা চার্জযুক্ত করেন যে, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার ক্ষেত্রে উক্তরূপ হস্তান্তর, বন্ধকীকরণ, দায়বদ্ধকরণ বা চার্জযুক্তকরণ এই আইন বা আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনের প্রতারণামূলক অগ্রাধিকার (fraudulent preference) হিসাবে ফলবিহীন পরিগণিত হয়;
(ঘ) তাহার পাওনাদারগণের দাবী ব্যর্থ বা বিলম্বিত করিবার উদ্দেশ্যে, যদি তিনি-
(অ) বাংলাদেশ ত্যাগ করেন বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থান করেন;
(আ) তাহার আবাসস্থল বা তাহার স্বাভাবিক কর্মস্থল ত্যাগ করেন;
(ই) এইরূপে আত্মগোপন করেন যে, তাহার পাওনাদারগণ তাহার সহিত যোগাযোগের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হন; অথবা
(ঈ) ষড়যন্ত্র বা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত তাহার স্বার্থ বিরোধী ডিক্রী, রায় বা আদেশ মানিয়া লন;
(ঙ) যদি কোন অর্থ পরিশোধের উদ্দেশ্যে কোন আদালতের ডিক্রী বাস্তবায়ন (execution) প্রক্রিয়ায় তাহার কোন সম্পত্তি বিক্রি হইয়া থাকে;
(চ) দেউলিয়া ঘোষিত হইবার জন্য যদি তিনি স্বয়ং এই আইনের অধীনে আদালতে আর্জি পেশ করেন;
(ছ) যদি তিনি তাহার কোন পাওনাদারকে এই মর্মে লিখিত নোটিশ প্রদান করেন যে, তিনি তাহার দেনা পরিশোধ স্থগিত রাখিয়াছেন বা রাখিতে যাইতেছেন;
(জ) যদি কোন পাওনা পরিশোধে অক্ষমতাহেতু কোন আদালতের ডিক্রী বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তাহাকে কারাগারে আটক রাখা হয়;
(ঝ) যদি অন্যুন ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা বৈধ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ দেনার বিপরীতে এক বা একাধিক পাওনাদার উক্ত পাওনা পরিশোধ করিতে বা উহার বাবদ পাওনাদারের সন্তোষ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জামানত প্রদান করিতে অনুরোধ জানাইয়া এই আইনের অধীন একটি আনুষ্ঠানিক দাবীনামা (formal demand) প্রেরণ করিয়া থাকেন এবং উক্ত দাবীনামা জারীর পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে দেনাদার দাবী পূরণ না করেন৷
(২) উপ-ধারা (১)(ঝ) তে উল্লিখিত দাবীনামা নির্ধারিত ফরমে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে জারি করিতে হইবে এবং উক্ত দাবী অগ্রাহ্যের ফলাফলও উহাতে উল্লেখ করিতে হইবে৷
(৩) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কোন প্রতিনিধি (agent) এর কাজ তাহার নিয়োগকর্তার (principal) কাজ বলিয়া গণ্য হইবে৷
ঘোষণাদেশ প্রদানের ক্ষমতা
১০৷ দেনাদার কোন দেউলিয়া কর্ম করিলে, এক বা একাধিক যথাযোগ্য (eligible) পাওনদার বা উক্ত দেনাদার, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, আর্জি পেশ করিতে পারিবেন, এবং আদালত উক্ত আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত দেনাদারকে দেউলিয়া ঘোষণা করিয়া একটি আদেশ প্রদান করিতে পারিবে; এই আইনে এইরূপ আদেশ দেউলিয়া ঘোষণাদেশ বলিয়া অভিহিত৷
দেউলিয়া বিষয়ক কার্যধারার আওতাধীন ব্যক্তিগণ
১১৷ (১) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত কোন ব্যক্তি ব্যতীত এমন যেকোন ব্যক্তি এই আইনের সূচিত দেউলিয়া বিষয়ক কার্যধারার আওতাধীন হইবেন, যিনি-
(ক) বাংলাদেশের বাসিন্দা হন অথবা তাহার পরিচালিত কাজকর্মের (business) প্রধান দপ্তর বাংলাদেশে রাখেন;
(খ) আর্জি পেশ করার অব্যবহিত পূর্ববর্তী এক বত্সরের মধ্যে যেকোন সময় বাংলাদেশে সাধারণভাবে বসবাস করিতেন অথবা উক্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তাহার একটি আবাসস্থল বা কর্মস্থল ছিল;
(গ) সাধারণতঃ প্রতিনিধির মাধ্যমে বাংলাদেশে তাহার কাজকর্ম চালাইয়া থাকেন৷
(২) নিম্ন বর্ণিত কোন ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে আদালত কোন আর্জি গ্রহণ করিবেনা, যথা :-
(ক) জাতীয় সংসদ এবং বিচার বিভাগীয় সংস্থাসহ কোন সরকারী সংস্থা;
(খ) কোন দাতব্য বা ধর্মীয় সংস্থা;
(গ) মূখ্য উদ্দেশ্যে আর্থিক লাভ নয় এমন সংবিধিবদ্ধ (statutory) সংস্থা;
(ঘ) সরকার কর্তৃক বা সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত কোন স্বশাসিত (autonomous) প্রতিষ্ঠান৷
পাওনাদার কর্তৃক আর্জি পেশ করার শর্তাবলী
১২৷ (১) দেনাদারের বিরুদ্ধে কোন পাওনাদার আর্জি পেশ করার অধিকারী হইবেন না, যদি তিনি একজন যথাযোগ্য পাওনাদার না হন, এবং যদি-
(ক) দেনাদারের নিকট উক্ত পাওনাদারের পাওনার পরিমাণ, অথবা দুই বা ততোধিক পাওনাদার যৌথভাবে আর্জি পেশ করিলে তাহাদের সাকুল্য পাওনার পরিমাণ ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা না হয়;
(খ) দেনাদার কর্তৃক কোন দেউলিয়া কর্ম সংগঠনের প্রাথমিক প্রমাণ উক্ত পাওনাদার উপস্থাপন না করেন; এবং
(গ) উক্ত দেউলিয়া কর্মটি আর্জি পেশ করার তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী এক বত্সরের মধ্যে সংগঠিত না হইয়া থাকে৷
(২) উক্ত পাওনাদার যদি একজন জামানতকারী (secured) পাওনাদার হন, তাহা হইলে তিনি তাহার আর্জিতে উক্ত জামানতের একটি আনুমানিক মূল্য উল্লেখ করিবেন, অন্যথায় তিনি জামানতবিহীন পাওনাদার বিবেচিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
দেনাদার কর্তৃক আর্জি পেশ করার শর্তাবলী
১৩৷ (১) একজন দেনাদার আর্জি পেশ করার অধিকারী হইবেন না, যদি তিনি আর্জিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করেন যে, তিনি তাহার দেনা পরিশোধে অক্ষম এবং যদি না-
(ক) তিনি উক্ত আর্জিতে আরও উল্লেখ করেন যে, তাহার দেনার পরিমাণ অন্তত ২০,০০০.০০ (বিশ হাজার) টাকা; অথবা
(খ) তাহার কোন দেনা পরিশোধে অক্ষমতার কারণে তাহার বিরুদ্ধে কোন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ডিক্রী বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তিনি গ্রেফতার বা কারাগারে আটক; অথবা
(গ) উক্তরূপ ডিক্রী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তাহার সম্পত্তি ক্রোকের (attachment) জন্য একটি আদেশ প্রদত্ত হইয়া থাকে এবং উক্ত আদেশ আর্জি পেশ করার সময় বলবত্ থাকে৷
(২) কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর তিনি তাহার দায় মুক্তির (discharge) জন্য আবেদন করিতে বা উক্ত আবেদন দাখিলের পর তত্সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আদালত সংশ্লিষ্ট ঘোষণাদেশ রদ করিলে, উক্ত ঘোষণাদেশ রদকারী আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে, উক্ত দেনাদার, দেউলিয়া ঘোষিত হইবার জন্য, কোন আর্জি পেশ করিতে পারিবেন না৷
(৩) আদালত উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত অনুমতি প্রদান করিবেন না, যদি না উহা এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে,-
(ক) দেনাদার তাহার দায়মুক্তির আবেদন করা বা উক্ত আবেদন পেশ করিবার পর তদবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণে বাধাগ্রস্ত ছিলেন; অথবা
(খ) যে সকল ঘটনার ভিত্তিতে দেউলিয়া ঘোষিত হইবার জন্য তিনি আর্জি পেশ করিয়াছেন, সেই সকল ঘটনা ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঘোষণাদেশের আর্জিতে উল্লিখিত ঘটনা হইতে ভিন্নতর৷
এখ্তিয়ারসম্পন্ন আদালতে আর্জি পেশ
১৪৷ ধারা ৪ এর বিধান সাপেক্ষে প্রতিটি আর্জি সেই আদালতে পেশ করিতে হইবে, যে আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্র (local limits)-
(ক) দেনাদার সাধারণতঃ বসবাস করেন বা তাহার কাজকর্ম পরিচালনা করেন বা ব্যক্তিগতভাবে কোন লাভজনক কাজ করিয়া থাকেন, অথবা তিনি গ্রেফতারকৃত বা কারাগারে আটককৃত থাকেন, অথবা
(খ) দেনাদার একক ব্যক্তি (individual) না হওয়ার ক্ষেত্রে, উহার প্রধান বা নিবন্ধিকৃত কার্যালয় অবস্থিত৷
আর্জি সত্যাখ্যান
১৫৷ এই আইনের অধীন প্রতিটি আর্জি লিখিত হইবে এবং উহা দেওয়ানী কার্যবিধিতে আর্জি (plaint) স্বাক্ষরকরণ এবং সত্যাখ্যান (verification) এর যে পদ্ধতি নির্ধারিত আছে সেই পদ্ধতিতে স্বাক্ষর ও সত্যাখ্যান করিতে হইবে৷
আর্জির বিষয়বস্তু
১৬৷ (১) দেনাদার কর্তৃক পেশকৃত প্রতিটি আর্জিতে নিম্্নবর্ণিত তথ্যাদি থাকিবে, যথা:-
(ক) দেনাদার যে তাহার দেনা পরিশোধে অক্ষম, সেইমর্মে একটি সুনির্দিষ্ট বিবৃতি;
(খ) সাধারণতঃ যেই স্থানে তিনি বসবাস করেন বা তাহার কাজকর্ম পরিচালনা করেন বা ব্যক্তিগতভাবে কোন লাভজনক কর্মে লিপ্ত থাকেন সেই স্থান অথবা তিনি গ্রেফতারকৃত বা কারারুদ্ধ থাকিলে যেই স্থানে তিনি কাহারও হেফাজতে আছেন সেই স্থান, অথবা দেনাদার একক ব্যক্তি না হইলে, উহার প্রধান বা নিবন্ধিকৃত কার্যালয় যেখানে অবস্থিত সেই স্থানের পূর্ণ বিবরণ;
(গ) যে আদালত তাহাকে গ্রেফতার বা কারারুদ্ধ করার বা তাহার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ প্রদান করিয়াছে সেই আদালত, এবং যেই ডিক্রী বা রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে উক্তরূপ কোন আদেশ প্রদত্ত হইয়াছে সেই ডিক্রী বা রায়, এর বিবরণ;
(ঘ) তাহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় আর্থিক দাবীর পরিমাণ, বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট পাওনাদারগণের নাম ও ঠিকানা, যতদূর তাহার জানা আছে বা যুক্তিসংগত সতর্কতা বা প্রচেষ্টা সহকারে জানা সম্ভব হয়;
(ঙ) তাহার যাবতীয় সম্পত্তির পরিমাণ এবং বিবরণসহ নিম্্নবর্ণিত তথ্যাদি:-
(অ) অর্থ ব্যতীত উক্তরূপ সকল সম্পত্তির মূল্যমান;
(আ) এইরূপ সম্পত্তি যেই স্থান বা স্থানসমূহে পাওয়া যাইবে উহার বিবরণ;
(ই) তাহার হিসাব বহিসহ সকল সম্পত্তি আদালতের নিকট অর্পণ করিতে তিনি ইচ্ছুক মর্মে একটি ঘোষণা:
তবে শর্ত থাকে যে, দেনাদারের ক্ষেত্রে তাহার অব্যাহতিপ্রাপ্ত (exempted) সম্পত্তি, যদি থাকে, এইরূপ অর্পণের আওতাভুক্ত হইবে না;
(চ) ইতিপূর্বে দেনাদার কোন সময়ে বাংলাদেশে বা অন্যত্র দেউলিয়া ঘোষিত হইবার উদ্দেশ্যে কোন আর্জি বা আবেদন পেশ করিয়াছেন কি না তদসম্পর্কে একটি বিবৃতি এবং এইরূপ কোন আবেদন বা আর্জি পেশ করিয়া থাকিলে-
(অ) উক্ত আবেদন বা আর্জি খারিজ হইয়াছে কি না এবং হইয়া থাকিলে উহার কারণ; অথবা
(আ) যদি তিনি তদপ্রেক্ষিতে দেউলিয়া ঘোষিত হইয়া থাকেন, তবে তাহার উক্ত দেউলিয়াত্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তদসহ এই মর্মে একটি বিবৃতি যে, ইতিপূর্বে তাহার সম্পর্কে প্রদত্ত কোন দেউলিয়া ঘোষণাদেশ রদ হইয়াছে কি না, ও রদ হইয়া থাকিলে, উহার কারণ৷
(২) পাওনাদার কর্তৃক পেশকৃত প্রত্যেকটি আর্জিতে তাহার সর্বোত্তম জ্ঞান মতে উপ-ধারা (১) (খ) তে উল্লিখিত দেনাদার সম্পর্কিত তথ্যাদি থাকিতে হইবে এবং তদসহ নিম্্নরূপ তথ্যাদিও উল্লেখ করিতে হইবে, যথা :-
(ক) দেনাদার কর্তৃক সংগঠিত দেউলিয়া কর্ম, এবং উহা সংগঠনের তারিখ; এবং
(খ) দেনাদারের বিরুদ্ধে পাওনাদারের দাবীর পরিমাণ ও বিবরণ৷
আর্জি প্রত্যাহার
১৭৷ দেনাদার বা পাওনাদার যিনিই দাখিল করিয়া থাকেন, আদালতের অনুমতি ব্যতীত কোন আর্জি প্রত্যাহার করা যাইবে না৷
কার্যধারা একীভূতকরণ
১৮৷ যে ক্ষেত্রে একই দেনাদারের বিরুদ্ধে দুই বা ততোধিক আর্জি পেশ করা হয়, অথবা যৌথ দেনাদারের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক আর্জি পেশ করা হয়, সেক্ষেত্রে আদালত যথাযথ মনে করিলে উহার বিবেচনায় উপযুক্ত শর্তসাপেক্ষে উক্তরূপ আর্জি-ভিত্তিক সকল কার্যধারা বা উহাদের মধ্যে যে কোন সংখ্যক কার্যধারাকে একীভূত করিতে পারিবে৷
আর্জি পেশকারী পাওনাদার প্রতিস্থাপনের ক্ষমতা
১৯৷ কোন পাওনাদার যথাযথ যত্ন সহকারে তাহার পেশকৃত আর্জি সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ না করিলে, আদালত তদস্থলে অন্য যে কোন যথাযোগ্য পাওনাদারকে প্রতিস্থাপন করিতে পারিবে৷
দেনাদারের মৃত্যুর পর কার্যধারা অব্যাহত রাখা
২০৷ যে দেনাদারের পক্ষে বা বিপক্ষে আর্জি পেশ করা হইয়াছে তাহার মৃত্যু হইলে উক্ত আর্জি-ভিত্তিক কার্যধারা ততদিন অব্যাহত থাকিবে যতদিন উক্ত দেনাদারের সম্পত্তি উদ্ধার ও বণ্টনের উদ্দেশ্যে উহা উক্তরূপে অব্যাহত রাখা প্রয়োজন হয়, যদি না আদালত লিখিত কারণ উল্লেখপূর্বক ভিন্নরূপ আদেশ না দেয়৷
আর্জি গ্রহণের পদ্ধতি
২১৷ আর্জি গ্রহণের (admission) সম্পর্কে দেওয়ানী কার্যবিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি যতদূর প্রযোজ্য হয় তাহা এই আইনের অধীন পেশকৃত আর্জির ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, এই আইন এবং বিধিতে এতদসম্পর্কে কোন ভিন্নতর পদ্ধতি বর্ণিত থাকিলে তাহাই অনুসরণ করিতে হইবে৷
আর্জি পেশের পরবর্তী কার্যপদ্ধতি
২২৷ (১) কোন আর্জি গ্রহণ করা হইলে, আদালত উহা শুনানীর জন্য এমন এক তারিখ নির্ধারণ করিয়া আদেশ প্রদান করিবে, যেন উক্ত তারিখ আদেশ প্রদানের তারিখের পরবর্তী ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে হয়৷
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত আদেশের নোটিশ নিম্্নবর্ণিতভাবে জারী করিতে হইবে, যথা:-
(ক) আদালত যেরূপ উপযুক্ত এবং বাস্তবসম্মত বলিয়া মনে করে সেইরূপ পন্থায় আর্জিকারী অথবা তাহার আইনজীবি বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির নিকট উক্ত নোটিশ প্রদান করিয়া;
(খ) আর্জিকারী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, আদালত যেরূপ উপযুক্ত এবং বাস্তবসম্মত মনে করে সেইরূপ পন্থায় এবং তদসহ বহুল প্রচারিত ও দেশের রাজধানী হইতে প্রকাশিত অন্ততঃ দুইটি বাংলা দৈনিকের পর পর দুইটি সংখ্যায় উক্ত দরখাস্ত ও আদেশটির সারমর্ম প্রকাশ করিয়া৷
অন্তর্বর্তী রিসিভার নিয়োগ
২৩৷ (১) কোন পাওনাদার কর্তৃক দাখিলকৃত আর্জি শুনানীর তারিখ নির্ধারণী আদেশ প্রদানকালে আদালত দেনাদারের সম্পত্তি বা উহার কোন অংশ বিশেষের জন্য একজন অন্তর্বর্তী রিসিভার নিয়োগ করিতে পারিবে, এবং দেনাদার কর্তৃক দাখিলকৃত আর্জির ক্ষেত্রে সাধারণতঃ উক্তরূপ নিয়োগ দান করিবে; এবং উক্ত সম্পত্তির দখল অবিলম্বে গ্রহণ না করিবার জন্য রিসিভারকে নির্দেশ দিবে; এবং তদ্প্রেক্ষিতে রিসিভার, আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষে, দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে নিযুক্ত কোন রিসিভার কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য ক্ষমতাসমূহ এবং তদ্সহ এই আইনের ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ এবং ৭১ ধারায় উল্লিখিত যেকোন ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন৷
(২) অন্তর্বর্তী রিসিভার নিয়োগের ব্যাপারে আদালত ৬৪(১) ধারায় বিবৃত শর্তাদি অনুসরণ করিবে৷
(৩) পূর্বোক্তরূপে কোন অন্তর্বর্তী রিসিভার নিয়োগ না করা হইলে, দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পূর্বে আদালত যেকোন সময় উক্তরূপ রিসিভার নিয়োগ করিতে পারিবে৷
দেনাদারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী কার্যধারা
২৪৷ (১) আর্জি শুনানীর তারিখ নির্ধারণী আদেশ প্রদানকালে অথবা দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পূর্বে যে কোন সময় আদালত, স্বীয় উদ্যোগে অথবা কোন পাওনাদারের আবেদনক্রমে, নিম্্নরূপ যেকোন এক বা একাধিক আদেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা:-
(ক) একক দেনাদার ব্যতীত অন্য যেকোন দেনাদারকে এই মর্মে একটি আদেশ প্রদান করা যাইবে যে, উক্ত দেনাদার তাহার প্রতিনিধি হিসাবে, আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে, একজন একক ব্যক্তিকে মনোনীত করিবে এবং এইরূপ মনোনীত ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়া অভিহিত হইবেন, এবং উক্ত দেনাদার এইরূপ মনোনয়নদানে ব্যর্থ হইলে, আদালত এমন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোনীত করিবে যিনি বা যাহারা উক্ত দেনাদারের কার্যকলাপ বা ব্যবসার অংশীদার বা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী, যে নামে অভিহিত হউন না কেন;
(খ) আদালত যেরূপ যথাযথ মনে করে সেইরূপ কোন সম্পত্তি সংগ্রহ করা প্রয়োজনীয় লেনদেন করা বা উহা করা হইতে বিরত থাকা, সংশ্লিষ্ট সভা বা শুনানীতে হাজির থাকা বা অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা বা এইসবের যে কোনটি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করিবার জন্য দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দান;
(গ) আর্জি খারিজ না হওয়া পর্যন্ত বা দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত না হওয়া পর্যন্ত দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হাজিরা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে যুক্তিসংগত জামানত প্রদান করিবার জন্য তাহাকে আদেশ প্রদান এবং উক্ত জামানত প্রদানে ব্যর্থ হইলে তাহাকে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা হইবে মর্মে নির্দেশ প্রদান;
(ঘ) দেনাদারের দখলভুক্ত বা নিয়ন্ত্রণাধীন হিসাব বহিসহ সকল সম্পত্তি বা উহার অংশবিশেষ, অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি থাকিলে উহা ব্যতীত, ক্রোক আদেশের মাধ্যমে বাস্তবে আটক করার জন্য আদেশ প্রদান;
(ঙ) দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দফা (খ) বা (গ) এর অধীনে প্রদত্ত কোন আদেশ পালনে ব্যর্থ হইলে তাহাকে, জামিনসহ বা জামিন ব্যতিরেকে, গ্রেফতার করার জন্য আদেশ প্রদান, এবং আর্জি খারিজ না হওয়া পর্যন্ত বা দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা বা জামানত সংক্রান্ত যুক্তিসংগত ও প্রয়োজনীয় শর্তাধীনে তাহাকে মুক্তিদানের নির্দেশ প্রদান:
তবে শর্ত থাকে যে, দফা (ঘ) বা (ঙ) এর অধীনে কোন আদেশ প্রদান করা হইবে না, যদি আদালত সন্তুষ্ট না হয় যে, দেনাদার বা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাহার কোন পাওনাদারের দাবী ব্যর্থ বা বিলম্বিত করা বা আদালতের পরোয়ানা বা নোটিশ এড়ানোর জন্য-
(অ) পলাতক রহিয়াছেন বা আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রের বাহিরে চলিয়া গিয়াছেন, অথবা পালাইয়া যাওয়া বা উক্ত সীমার বাহিরে চলিয়া যাওয়ার উপক্রম করিয়াছেন বা উক্ত সীমার বাহিরে অবস্থান করিতেছেন, অথবা
(আ) দরখাস্ত শুনানীকালে বা দেনাদারের দেউলিয়াত্বকালে পাওনাদারগণ বা আদালতের কাজে লাগিতে পারে এইরূপ কোন সম্পত্তি, অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি ব্যতীত, বা তদ্সম্পর্কিত কোন দলিলপত্র-এর অস্তিত্ব প্রকাশ করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন বা উহা লুকাইয়াছেন বা বিনষ্ট বা হস্তান্তর করিয়াছেন বা আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রে হইতে সরাইয়া ফেলিয়াছেন বা এইরূপ যেকোন কাজ করিবার ব্যবস্থা করিতেছেন৷
দেনাদারের কর্তব্য
২৫৷ (১) আর্জি শুনানীর তারিখ নির্ধারণী আদেশ প্রদত্ত হইলে এবং তত্পরবর্তী যে কোন সময় আদালত বা রিসিভারের নির্দেশমত দেনাদারের কর্তব্য হইবে-
(ক) তাহার সকল হিসাব বহি পেশ করা;
(খ) তাহার সম্পত্তির তালিকা, তাহার পাওনাদার ও তাহাদের পাওনার তালিকা এবং তাহার দেনাদার ও তাহাদের দেনার তালিকা উপস্থাপন করা;
(গ) আদালত বা রিসিভারের জিজ্ঞাসাবাদের উত্তর প্রদানের জন্য হাজির হওয়া;
(ঘ) তাহার সম্পত্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দলিল সম্পাদন করা;
(ঙ) সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় অন্য সকল কার্য সম্পাদন করা৷
(২) আর্জি শুনানীর তারিখ-নির্ধারণী আদেশ প্রদত্ত হইলে, উক্ত আর্জি খারিজ না হওয়া পর্যন্ত, অথবা দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইলে, উহা রদ না হওয়া পর্যন্ত, অথবা আদালত ভিন্নরূপ আদেশ প্রদান না করা পর্যন্ত দেনাদার তাহার কোন পাওনাদারের বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী মামলা বা দাবী আদায়মূলক কোন আইনগত কার্যধারা রুজু করিতে পারিবেন না৷
গ্রেফতারকৃত বা আটক দেনাদারের মুক্তি
২৬৷ (১) কোন আদালত প্রদত্ত অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত ডিক্রী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় যদি কোন দেনাদার গ্রেফতার হন বা কারাগারে আটক থাকেন, তাহা হইলে আদালত, আর্জি শুনানীর তারিখ-নির্ধারণী আদেশ প্রদানকালে বা তদ্পরবর্তী যে কোন সময়, উহার বিবেচনায় যুক্তিসংগত ও প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে উক্ত দেনাদারকে মুক্ত করিবার আদেশ দিতে পারিবে৷
(২) এই ধারার অধীনে মুক্তি দেওয়া হইয়াছে এইরূপ যেকোন ব্যক্তিকে পুনরায় গ্রেফতার করিবার জন্য এবং যাহার হেফাজত বা যে কারাগার হইতে তাহাকে মুক্তি দেওয়া হইয়াছে সেই একই হেফাজত বা একই কারাগারে তাহাকে প্রেরণ করিবার জন্য আদালত যেকোন সময় আদেশ দিতে পারিবে৷
(৩) এই ধারার অধীনে কোন আদেশ প্রদানকালে আদালত সংশ্লিষ্ট কারণ লিপিবদ্ধ করিবে৷
দেনাদারের আপত্তি দাখিল ও শুনানীর পদ্ধতি
২৭৷ (১) কোন যথাযোগ্য পাওনাদার কর্তৃক আর্জি পেশ করার ক্ষেত্রে, দেনাদার, আদালত কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে, তবে আর্জি শুনানীর তারিখের পূর্বে, উক্ত আর্জির ব্যাপারে তাহার কোন আপত্তি থাকিলে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখিতভাবে পেশ করিতে পারিবেন; এবং সরকার প্রয়োজনবোধে এইরূপ আপত্তির ফরম বিধি দ্বারা নির্ধারণ করিতে পারিবে৷
(২) আর্জি শুনানীর জন্য নির্ধারিত তারিখে, অথবা উপ-ধারা (৩) এর বিধান সাপেক্ষে, উক্ত শুনানী মুলতবী হইলে পরবর্তী শুনানীর তারিখে আদালত নিম্্নবর্ণিত বিষয়গুলি প্রমাণের নির্দেশ দিবে, যথা-
(ক) আর্জি দাখিলের ব্যাপারে পাওনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দেনাদারের অধিকার:
তবে শর্ত থাকে যে, দেনাদার আর্জি দাখিল করিয়া থাকিলে, দেনা পরিশোধের দায় প্রমাণের উদ্দ্যেশ্যে, এতটুকু প্রমাণ উপস্থাপনে নির্দেশ প্রদান করিলেই চলিবে, যাহা হইতে উক্ত দায় আদালতের নিকট প্রাথমিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া প্রতিপন্ন হয়: এবং আদালত তন্মর্মে সন্তুষ্ট হইলে বিষয়টি সম্পর্কে অতিরিক্ত শুনানী করার ক্ষেত্রে কোন বাধ্য-বাধকতা থাকিবেনা;
(খ) আর্জি কোন পাওনাদার পেশ করিয়া থাকিলে এবং তত্প্রেক্ষিতে দেনাদার ইতিমধ্যে হাজির না হইয়া থাকিলে, দেনাদারকে ২২(২) ধারার অধীন নোটিশ প্রদান; এবং
(গ) দেনাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগকৃত দেউলিয়া কর্ম৷
(৩) আর্জি শুনানী সাধারণতঃ ক্রমাগতভাবে প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হইবে, এবং আর্জিকারী পাওনাদার বা পাওনাদারগণ ভিন্নরূপে সম্মত না হইলে কোন অবস্থাতেই শুনানী একবারে সাত দিনের বেশী সময়ের জন্য মুলতবী করা যাইবে না:
তবে শর্ত থাকে যে, যে মেয়াদ বা মেয়াদসমূহব্যাপী শুনানী মুলতবী থাকে উহার সাকুল্য পরিমাণ ৯০ (নব্বই) দিনের বেশী হওয়া চলিবে না৷
(৪) শুনানীর সময় দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থাকিলে তাহাকে আদালত বা, তত্কর্তৃক নির্দেশিত হইলে, রিসিভার, উক্ত দেনাদারের আচরণ, লেনদেন এবং সম্পত্তি সম্পর্কে পাওনাদারগণের উপস্থিতিতে, যদি কেহ থাকেন, জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন এবং পাওনাদারগণও উক্ত দেনাদার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঐসকল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন৷
(৫) উপ-ধারা (৩) এ বিনির্দিষ্ট সময়সীমা সাপেক্ষে, আদালত দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বা কোন পাওনাদারকে তাহাদের দাবীকৃত কোন বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় মঞ্জুর করিতে পারে, যদি আদালত সন্তুষ্ট হয় যে, আর্জির যথাযথ নিষ্পত্তির স্বার্থে বিষয়টির উপর সাক্ষ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন৷
(৬) দেনাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যাদি এবং শুনানীর সময় গৃহীত মৌখিক সাক্ষ্যের মৌলিক ফলাফল সম্বলিত একটি বিবরণ আদালত প্রস্তুত করিবে এবং এই বিবরণ কার্যধারা নথির অংশ হিসাবে থাকিবে৷
দরখাস্ত খারিজকরণ
২৮৷ (১) পাওনাদার কর্তৃক দাখিলকৃত আর্জির ক্ষেত্রে আদালত উহা খারিজ করিয়া দিবে, যদি-
(ক) নিম্্নবর্ণিত বিষয়াদির প্রমাণ সম্পর্কে আদালত সন্তুষ্ট না হয়, যথা-
(অ) দরখাস্ত দাখিল করার জন্য উক্ত পাওনাদারের অধিকার;
(আ) দরখাস্ত শুনানীর তারিখ-নির্ধারণী আদেশের নোটিশ দেনাদারের উপর ২২(২) ধারা অনুসারে জারীকরণ; এবং
(ই) অভিযোগকৃত দেউলিয়া কর্ম; অথবা
(খ) দেনাদার আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারে যে,-
(অ) তিনি তাহার দেনা পরিশোধ করিতে সক্ষম;
(আ) তিনি কোন স্বেচ্ছাকৃত খেলাপী (wilfull defaulter) নহেন; অথবা
(গ) অন্য কোন কারণে দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদান করা সমীচীন নহে মর্মে আদালত সন্তুষ্ট হয়৷
ব্যাখ্যা৷- এই উপ-ধারায় “স্বেচ্ছাকৃত খেলাপী” অর্থ এমন একজন দেনাদার যিনি, আনুষ্ঠানিক দাবীনামা জারির পর, এক বত্সর সময়ব্যাপী অন্ততঃ ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকার অধিক ব্যাংক-ঋণ অপরিশোধিত রাখিয়াছেন৷
(২) দেনাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরখাস্তের ক্ষেত্রে, উক্ত দরখাস্ত দাখিল করার জন্য দেনাদারের অধিকার সম্পর্কে সন্তুষ্ট না হইলে আদালত উহা খারিজ করিয়া দিবে৷
ক্ষতিপূরণ প্রদান
২৯৷ (১) কোন পাওনাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরখাস্ত যদি ২৮(১) ধারার অধীনে খারিজ হইয়া যায় এবং আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, দরখাস্তটি ছিল অসার বা হয়রানিমূলক, তাহা হইলে, দেনাদারের আবেদনক্রমে, আদালত উক্ত দরখাস্ত এবং তজ্জনিত কার্যধারার ফলশ্রুতিতে দেনাদারের খরচ বা ক্ষতিপূরণের জন্য আদালত অনধিক ১,০০,০০০.০০ (এক লক্ষ) টাকার ক্ষতিপূরণ দেনাদারকে প্রদানের জন্য পাওনাদারকে আদেশ দিতে পারে এবং ক্ষতিপূরণের টাকা অর্থদণ্ড (fine) এর ন্যায় একই পদ্ধতিতে আদায় করা যাইবে৷
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেওয়া হইলে, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত দরখাস্ত এবং তজ্জনিত কার্যধারার ব্যাপারে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ অথবা ভিন্নরূপ প্রতিকার দাবী করিয়া অন্য কোন আইনের অধীনে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী কার্যধারা রুজু করা যাইবে না৷
দেউলিয়া ঘোষণাদেশ
৩০৷ (১) কোন আর্জি খারিজ করা না হইলে আদালত-
(ক) একটি দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদান করিবে; এবং
(খ) একক দেনাদারের ক্ষেত্রে, উক্ত আদেশে-
(অ) দেনাদারকে দায়মুক্তিকরণের বিষয়টি প্রথম যে তারিখে ৪৭(৩) ধারা অনুসারে বিবেচনা করা হইবে সেই তারিখটি নির্ধারণ করিবে, এবং উল্লেখ করিবে যে, উক্ত তারিখের মধ্যে দেনাদার তাহার দায়মুক্তির জন্য আবেদন করিতে পারেন, যদি দেনাদার স্বয়ং আর্জি দাখিল না করিয়া থাকেন;
(আ) আরও উল্লেখ করিবে যে, দেনাদার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ, যাহা যথাযোগ্য পাওনাদারগণের দাবীকৃত অর্থের শতকরা দশ ভাগের কম হইবে না, আদালতে জমা দেওয়ার পর উক্ত ঘোষণাদেশের বিরুদ্ধে ৯৬ ধারার অধীনে আপীল করিতে পারিবে৷
(২) পর্যাপ্ত কারণ দর্শানো হইলে, আদালত দেনাদারের দায়মুক্তির আবেদন পেশ করার সময়সীমা বর্ধিত করিতে পারিবে এবং সেই ক্ষেত্রে এইরূপ বর্ধিতকরণের বিষয়, আদালতের বিবেচনায় উপযুক্ত পদ্ধতিতে, সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করিবে৷
দেউলিয়া ঘোষণাদেশের ফলাফল
৩১৷ (১) দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইলে, দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি এই আইনের বিধান মোতাবেক তাহার বিষয়-সম্পত্তি উদ্ধার এবং উহা পাওনাদারগণের মধ্যে বণ্টন করিবার নিমিত্তে আদালতকে সর্বাত্মক সহায়তা করিবে৷
(২) দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইলে দেনাদারের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পদ ব্যতীত অন্যান্য সকল বিষয় সম্পত্তি আপনা-আপনি রিসিভারে ন্যস্ত হইবে এবং কোন ক্ষেত্রে রিসিভার নিযুক্ত না হইয়া থাকিলে, উহা আপনা-আপনি আদালতে ন্যস্ত হইবে, এবং উক্ত সম্পদ পাওনাদারগণের মধ্যে বণ্টনযোগ্য হইবে এবং উক্তরূপে ন্যস্ত সম্পদ বণ্টনযোগ্য সম্পদরূপে অভিহিত হইবে৷
(৩) দেউলিয়া বিষয়ক কার্যধারা নিষ্পন্নাধীন থাকাকালে, এই আইনের অধীন প্রমাণযোগ্য যে কোন দেনার ব্যাপারে কোন পাওনাদার উক্ত দেনাদারের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি এবং বণ্টনযোগ্য সম্পদের বিরুদ্ধে অন্য কোন প্রতিকার দাবী করিতে বা কোন দেওয়ানী মামলা বা অন্যবিধ কার্যধারা দায়ের করিতে পারিবেন না, তবে আদালত এই বিষয়ে অনুমতি দিলে এবং কোন শর্ত আরোপ করিলে তদনুসারে উক্ত প্রতিকার দাবী বা কার্যধারা দায়ের করা যাইবে৷
(৪) এই ধারার বিধান না থাকিলে কোন জামানতকারী পাওনাদার যে পদ্ধতিতে তাহার জামানত আদায় করার বা তত্সম্পর্কে অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকারী হইতেন, এই ধারার কোন কিছুই তাহার সেই অধিকারকে খর্ব করিবে না৷
(৫) দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইলে উহা আর্জি পেশ করার তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে৷
অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি
৩২৷ এই আইনের অন্য কোন বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, একক দেনাদারের নিম্্নবর্ণিত সম্পত্তির দখল ২৩ ধারার অধীনে গ্রহণ করা যাইবে না বা উহা ৩১ ধারার অধীনে আদালতে বা রিসিভারে ন্যস্ত হইবে না এবং এইরূপ সম্পত্তি অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পত্তি নামে অভিহিত হইবে, যথা:-
(ক) যন্ত্রপাতি, যাহা দেনাদার স্বয়ং ব্যবহার করেন;
(খ) পরিধেয় বস্ত্রাদি, গৃহস্থালির সরঞ্জামাদি এবং দেনাদার, তাহার স্ত্রী বা, ক্ষেত্রমত, স্বামী এবং সন্তানাদির ব্যবহার্য অনুরূপ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী;
(গ) দেনাদারের (অবন্ধককৃত) বসবাসস্থান বা বাসগৃহ, যাহার ভিত্তিভূমি বা মেঝের আয়তন, শহর এলাকায় এক বা একাধিক তলায় মোট অনধিক ২৫০০ বর্গফুট, এবং অন্যান্য এলাকায় এক বা একাধিক তলায় মোট ৫,০০০ বর্গফুট-এর অধিক নয়:
তবে শর্ত থাকে যে, (ক) ও (খ) দফায় উল্লিখিত সামগ্রীর মোট মূল্য ৩,০০,০০০.০০ (তিন লক্ষ) টাকার অধিক হওয়া চলিবে না৷
নিষ্পন্নাধীন মামলা ইত্যাদির স্থানান্তর
৩৩৷ (১) আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন দেনাদারের বিরুদ্ধে অর্থ বা অন্য কোন সম্পত্তির দাবী সংক্রান্ত কোন মামলা বা অন্য কোন কার্যধারা যেকোন আদালতে নিষ্পন্নাধীন থাকিলে, উক্ত আদালত যদি প্রমাণ পায় যে, উক্ত দেনাদারের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহা হইলে উক্ত আদালত ঘোষণাদেশ প্রদানকারী আদালতে উক্ত মামলা বা কার্যধারা স্থানান্তর করিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ মামলা বা অন্যবিধ কার্যধারা হইতে উদ্ভূত কোন আপীল বা রিভিশন যদি কোন উচ্চতর আদালতে নিষ্পন্নাধীন থাকে, তাহা হইলে উক্ত উচ্চতর আদালত আপীল বা রিভিশনটি ধারা ৯৬ তে উল্লিখিত আপীল আদালতে বদলী করিবে৷
(২) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, উপ-ধারা (১) এবং উহার শর্তাংশে উল্লিখিত আদালত যথাক্রমে দেউলিয়া বিষয়ক আদালত এবং আপীল আদালত বলিয়া গণ্য হইবে; এবং উক্তরূপ কোন আদালত এই ধারার অধীনে কোন মামলা বা কার্যধারা স্থানান্তরের আদেশ প্রদান বা প্রত্যাখ্যান করিলে ধারা ৯৬ বা, ক্ষেত্রমত, ৯৯ এর বিধান অনুযায়ী যথাক্রমে আপীল বা পুনরীক্ষণ ব্যতীত উক্ত আদেশের ব্যাপারে অন্য কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা চলিবেনা৷
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীনে বদলীকৃত মামলা বা অন্যবিধ কার্যধারা বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা হইবে৷
ঘোষণাদেশ প্রকাশ
৩৪৷ (১) আদালত দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের বিষয় বিধৃত করিয়া একটি নোটিশ সরকারী গেজেটে এবং তত্সহ বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রকাশের ব্যবস্থা করিবে এবং উক্ত নোটিশে দেউলিয়ার নাম, ঠিকানা ও পরিচিতি, ঘোষণাদেশ প্রদানের তারিখ, দেনাদারের দায়মুক্তি আবেদন করার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা এবং ঘোষণাদেশ প্রদানকারী আদালতের নাম উল্লেখ করিতে হইবে, এবং যথাযথ বিবেচনা করিলে, আদালত অন্য কোন তথ্যও নোটিশে অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবে৷
(২) কোন পাওনাদারের আবেদনক্রমে যদি আদালত উক্ত নোটিশ কোন পত্রিকায় প্রকাশের আদেশ দেয়, তাহা হইলে উহার প্রকাশনা-ব্যয় বহনের জন্য আদালত উক্ত পাওনাদারকে নির্দেশ দিতে পারে৷
নিরাপত্তামূলক আদেশ
৩৫৷ (১) দেউলিয়া ঘোষিত দেনাদার তাহার কোন দেনার কারণে তাহাকে গ্রেফতার বা কারাগারে আটক রাখার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রার্থনা করিয়া আদালতে আবেদন করিতে পারিবে, এবং তত্প্রেক্ষিতে আদালত, কোন পাওনাদারকে নোটিশ দেওয়া প্রয়োজন মনে করিলে, উহার বিবেচনায় উপযুক্ত পদ্ধতিতে নোটিশ প্রদান ও সংশ্লিষ্ট পাওনাদারকে শুনানীর যুক্তিসংগত সুযোগ দিয়া, উক্ত দেনাদারের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক আদেশ দিতে পারিবে৷
(২) দেনাদারের সকল দেনা বা তন্মধ্যে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত যে কোন দেনার ব্যাপারে নিরাপত্তামূলক আদেশ প্রদান করা যাইবে; এবং আদালত কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে ও সময়ের জন্য উক্ত আদেশ বলবত্ হইবে এবং আদালত যখনি উপযুক্ত মনে করিবে তখনি উহা প্রত্যাহার বা নবায়ন করিতে পারিবে৷
(৩) যে দেনার ব্যাপারে নিরাপত্তামূলক আদেশ প্রদত্ত হয় সেই দেনার দায়ে কোন দেনাদারকে গ্রেফতার করা কিংবা কারাগারে আটক রাখা যাইবে না, এবং এইরূপ আদেশের খেলাপ করিয়া কোন দেনাদারকে গ্রেফতার বা আটক করা হইলে উক্ত আদেশের একটি অনুলিপি প্রদর্শন করিবামাত্র অবিলম্বে তাহাকে মুক্তি দেওয়া হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, যদি উক্ত নিরাপত্তামূলক আদেশ প্রত্যাহার করা হয় বা সংশ্লিষ্ট ঘোষণাদেশ রদ করা হয়, তাহা হইলে উক্ত নিরাপত্তামূলক আদেশ কোন পাওনাদারের অধিকার ক্ষুণ্ন করিবে না৷
পাওনাদার কমিটি
৩৬৷ (১) যথাযোগ্য পাওনাদারের সংখ্যা দশ এর অধিক হইলে আদালত কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে অথবা এইরূপ বিধি না থাকিলে, আদালত কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতিতে একটি পাওনাদার কমিটি গঠনের জন্য রিসিভারকে আদেশ দিবে এবং এই কমিটি আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অনধিক পাঁচজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে৷
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে গঠিত পাওনাদার কমিটি রিসিভারকে তাহার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারিবে, এবং রিসিভার, এই আইন ও বিধির বিধানাবলীর ব্যত্যয় না ঘটাইয়া, যথাসম্ভব উক্ত পরামর্শ মানিয়া চলিবে৷
ঘোষণাদেশের পর গ্রেফতারের ক্ষমতা
৩৭৷ দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পর পাওনাদার কমিটি বা রিসিভার বা কোন পাওনাদারের আবেদনক্রমে, আদালতের যদি এইরূপ বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে, দেনাদার বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইনের অধীন তাহার উপর আরোপিত বা আরোপণীয় কোন দায়িত্ব (obligation) এড়ানোর উদ্দেশ্যে পলাতক রহিয়াছেন অথবা আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রের বাহিরে চলিয়া গিয়াছেন, তাহা হইলে তাহাকে গ্রেফতারের জন্য আদালত পরোয়ানা জারি করিতে পারিবে, এবং তিনি আদালতে হাজির হইলে বা তাহাকে আনীত হইলে, যদি আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, তিনি উক্ত উদ্দেশ্যে পলাতক ছিলেন বা চলিয়া গিয়াছিলেন, তাহা হইলে জামানতের ব্যাপারে যুক্তিসংগত প্রয়োজনীয় শর্তে তাহাকে মুক্তিদানের জন্য আদালত আদেশ দিতে অথবা এইরূপ জামানত প্রদত্ত না হইলে তাহাকে অনধিক তিন মাসের জন্য দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিতে পারিবে৷
পাওনাদার ও পাওনা-তফসিল
৩৮৷ (১) দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হইলে, দেউলিয়ার বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন প্রমাণযোগ্য দেনার দাবীদার সকল ব্যক্তি বিধি দ্বারা নির্ধারিত বা আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে তাহার দাবীকৃত দেনার পরিমাণ ও বিবরণ সম্বলিত একটি সংক্ষিপ্ত দাবীনামা এবং উহার সমর্থনে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য উপস্থাপন করিবে, এবং আদালত, আদেশ দ্বারা, উক্তরূপ দেনার প্রমাণকারী সকল ব্যক্তি ও তাহাদের পাওনার পরিমাণ নির্ধারণ করিবে এবং ঐ সকল ব্যক্তি ও তাহাদের পাওনার বিবরণ সম্বলিত একটি তফসিল প্রণয়ন করিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৩৯(১) এর বিধান সাপেক্ষে, যদি আদালতের মতে কোন দেনার পরিমাণ মোটামুটি সঠিকভাবে (fairly) নির্ধারণ করা সম্ভব না হয়, তাহা হইলে আদালত সেই মর্মে একটি আদেশ প্রদান করিবে এবং তত্প্রেক্ষিতে উক্ত দেনা উক্ত তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হইবে না৷
(২) এইরূপ তফসিলের একটি অনুলিপি আদালত ভবনের নোটিশ বোর্ডে বা অন্য কোন প্রকাশ্য স্থানে সাঁটিয়া দিতে হইবে৷
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীনে তফসিল প্রণীত হওয়ার পরও যে কোন ব্যক্তি, একক দেনাদারের ক্ষেত্রে, দেউলিয়ার দায়মুক্তির পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়, এবং একক দেনাদার ব্যতীত অন্য কোন দেনাদারের ক্ষেত্রে, এতদুদ্দেশ্যে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পূর্বে যে কোন সময় বা আদালত এইরূপ তারিখ নির্ধারণ না করিলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত তারিখের পূর্বে যে কোন সময়, এই আইনের অধীন প্রমাণযোগ্য দেনার ব্যাপারে একজন পাওনাদার হিসাবে তাহার নাম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করিবার আদেশের প্রার্থনায় আদালতের নিকট আবেদন করিতে এবং তাহার পাওনা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য উপস্থাপন করিতে পারিবে; এবং আদালত তত্প্রেক্ষিতে রিসিভার এবং ইতিপূর্বে পাওনাদার হিসাবে প্রমাণিত ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদানপূর্বক এবং তাহাদের কোন আপত্তি থাকিলে তত্সম্পর্কে শুনানীর যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদানপূর্বক আবেদনটি মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করিবে৷
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন কোন আবেদন বা আপত্তি বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ দাখিল করিতে হইবে এবং এইরূপ বিধি না থাকিলে, আদালত কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ দাখিল করিতে হইবে৷
প্রমাণযোগ্য দেনা
৩৯৷ (১) যথাযথ মূল্য নিরূপণ করা সম্ভব না হওয়ার কারণে যে সকল দেনা ধারা ৩৮ এর অধীন প্রণীত তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয় নাই, সেই সকল দেনা এবং কোন চুক্তি হইতে বা বিশ্বাস ভংগের (breach of trust) ঘটনা হইতে উদ্ভূত অনির্ধারিত (unliquidated) ক্ষতিপূরণের দাবী ব্যতীত, অন্য যেকোন ধরনের অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণমূলক দাবী এই আইনের অধীনে প্রমাণযোগ্য হইবে, যদি এতদ্বিষয়ে আদালত ভিন্নতর কোন সিদ্ধান্ত প্রদান না করে৷
(২) একক দেনাদার ব্যতীত অন্য কোন দেনাদার দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পূর্বে যেকোন সময়, এবং দেউলিয়া হিসাবে একক দেনাদারের দায়মুক্তির পূর্বে যে কোন সময়, উহার বা তাহার অর্জিত যাবতীয় দেনা এবং দায়-দায়িত্ব (liabilities), বর্তমান বা ভবিষ্যত্ অথবা নিশ্চিত (certain) বা ঘটনাপেক্ষ (contingent) যে কোন প্রকৃতির হউক না কেন, এই আইনের অধীন প্রমাণযোগ্য দেনা বলিয়া গণ্য হইবে, যদি না আদালত ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত প্রদান করে৷
ঘোষণাদেশ রদ করার ক্ষমতা
৪০৷ যে ক্ষেত্রে আদালতের মতে কোন দেনাদারকে দেউলিয়া ঘোষণা করা যথাযথ হয় নাই, অথবা যে ক্ষেত্রে আদালতের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রমাণিত হয় যে, উক্ত দেনাদারের দেনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে আদালত, দেনাদার বা অন্য কোন স্বার্থবান ব্যক্তির আবেদনক্রমে, উক্ত ঘোষণাদেশ লিখিত আদেশ দ্বারা রদ করিবে; এবং আদালত নিজ উদ্যোগে অথবা রিসিভার বা কোন পাওনাদারের আবেদনক্রমে, এইরূপ যেকোন দেউলিয়া ঘোষণাদেশও রদ করিতে পারিবে, যাহা ধারা ১৩(২) এর বিধান অনুসারে আর্জি দাখিলের অধিকারী নহেন এইরূপ কোন দেনাদারের দরখাস্তের ভিত্তিতে প্রদত্ত হইয়াছে৷
একই দেনাদারের বিরুদ্ধে একাধিক সমগামী ঘোষণাদেশ রদ করার ক্ষমতা
৪১৷ কোন ক্ষেত্রে দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পর উক্ত আদেশ প্রদানকারী আদালতে যদি প্রমাণিত হয় যে, একই দেনাদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাহিরে অন্য কোন আদালতে দেউলিয়া বিষয়ক বা সমফলপ্রদ অন্য কোন কার্যধারা নিষ্পন্নাধীন আছে এবং উক্ত কার্যধারায় দেনাদারের সম্পত্তি উক্ত অন্য আদালতের মাধ্যমে অধিকতর সুবিধাজনকভাবে বণ্টন করা যাইবে তাহা হইলে আদালত উক্ত ঘোষণাদেশ রদ কিংবা তত্সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যধারা স্থগিত করিতে পারিবে৷
ঘোষণাদেশ রদ পরবর্তী কার্যধারা
৪২৷ (১) কোন দেউলিয়া ঘোষণাদেশ রদ করা হইলে, উক্ত রদকরণের পূর্বে আদালত বা, ক্ষেত্রমত, রিসিভার দেনাদারের সম্পত্তির বিক্রয় বা অন্যবিধভাবে উহাদের নিষ্পত্তিকরণ, যথাযথভাবে কোন অর্থ পরিশোধসহ এতদ্বিষয়ে যে সকল কার্য সম্পাদন করিয়াছেন সেই সকল কার্য বৈধ হইবে, এবং এইরূপ বৈধতা সাপেক্ষে, দেউলিয়া ঘোষিত দেনাদারের সম্পত্তি আদালত কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তির উপর ন্যস্ত হইবে, অথবা এইরূপ ব্যক্তি নিযুক্ত না হইলে, আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোন শর্ত সাপেক্ষে, উক্ত সম্পত্তির যতটুকুর উপর দেনাদারের অধিকার ও স্বার্থ রহিয়াছে ততটুকু দেনাদারের উপর পুনঃন্যস্ত হইবে৷
(২) ঘোষণাদেশ রদকারী প্রতিটি আদেশ সরকারী গেজেটে এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন পদ্ধতিতেও প্রকাশ করিতে হইবে৷
চতুর্থ অধ্যায়
আপোষ মিমাংসা, পুনবির্ন্যাস ও পুর্নগঠন
আপোষ মিমাংসা এবং পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা
আপোষ মিমাংসা এবং পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা
৪৩৷ (১) দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদানের পর যদি কোন দেনাদার তাহার দেনার দায় মিটানোর জন্য কোন আপোষ-মিমাংসা (composition) প্রস্তাব বা তদুদ্দেশ্যে তাহার বিষয়াদি সম্পর্কে পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা (scheme of arrangement) সম্বলিত প্রস্তাব, অতঃপর এই অধ্যায়ে প্রস্তাব বলিয়া অভিহিত, উপস্থাপন করেন, তাহা হইলে আদালত উক্ত প্রস্তাব বিবেচনার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করিবে এবং তদ্সম্পর্কে সকল পাওনাদারকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং এইরূপ বিধি না থাকিলে, আদালতের বিবেচনামত যথাযথ নোটিশ প্রদান করিবে, এবং প্রস্তাবটির বাস্তবায়নযোগ্যতা সম্পর্কে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও দাখিল করার জন্য রিসিভারকে নির্দেশ দিবে; এবং অতঃপর রিসিভার তাহার সুনির্দিষ্ট মতামতসহ উক্ত প্রতিবেদন দাখিল করিবেন৷
(২) আদালতে প্রমাণিত সকল দেনার মূল্যমানের ভিত্তিতে এবং নথিতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি, দুই-তৃতীয়াংশ পাওনাদার আদালতে ব্যক্তিগতভাবে বা তাহাদের আইনজীবী বা তাহাদের নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত হইয়া উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত প্রস্তাব বিবেচনান্তে গ্রহণ করেন এবং আদালত উহা অনুমোদন করে, তাহা হইলে উক্ত প্রস্তাব সকল পাওনাদার যথাযথভাবে গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে৷
(৩) উপ-ধারা (২) এ বর্ণিতমতে প্রস্তাবটি বিবেচনার সময় দেনাদার তাহার প্রস্তাবের শর্তাবলী সংশোধন করিতে পারিবেন এবং আদালত উক্ত সংশোধন অনুমোদন করিতে পারিবে, যদি আদালতের মতে উক্ত সংশোধন সামগ্রিকভাবে সকল পাওনাদারের জন্য কল্যাণকর হয়৷
(৪) প্রস্তাবটি সম্পর্কে রিসিভারের প্রতিবেদন এবং কোন পাওনাদার কর্তৃক বা তাহার পক্ষে উত্থাপিত আপত্তি শুনানী ও বিবেচনার পর আদালত যদি মনে করে যে, প্রস্তাবটির শর্তাবলী যুক্তিসংগত নহে বা সামগ্রিকভাবে পাওনাদারগণের জন্য কল্যাণকর হইবে না, তাহা হইলে আদালত উক্ত প্রস্তাবটির অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করিবে৷
(৫) যদি প্রস্তাবটি সম্পর্কিত এমন কোন বিষয় আদালতের গোচরীভূত হয়, যাহা প্রমাণিত হইলে আদালতকে দেনাদারের দায়মুক্তি প্রত্যাখ্যান স্থগিত বা তদ্সম্পর্কে শর্ত আরোপ করিতে হইবে, তাহা হইলে আদালত উক্ত প্রস্তাবের অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করিবে, যদি না উক্ত বিষয়ে পাওনাদারগণকে নোটিশ প্রদান এবং শুনানীর পর পাওনাদারগণের পাওনা পরিশোধের উদ্দেশ্যে, দেনাদার আদালতের বিবেচনামতে যুক্তিসংগত জামানত প্রদান করে:
তবে শর্ত থাকে যে, এই উপ-ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জামানতবিহীন পাওনাদারগণের প্রাপ্য সকল পাওনার ১৫% হইতে ৬৫% এবং ব্যাংক ঋণের পাওনাদারগণের প্রাপ্য সকল পাওনার ২৫% হইতে ৭৫%, যাহা আদালত নির্ধারণ করে, এর সমপরিমাণ অর্থের জামানত প্রদান করা হইলে, যুক্তিসংগত জামানত প্রদত্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে:
আরও শর্ত থাকে যে, উক্ত যুক্তিসংগত জামানত নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালত দেনাদারের দেনার সম্পর্কে নিম্্নবর্ণিত পরিস্থিতিগুলি বিবেচনা করিবে, যথা:-
(ক) দেনাদার সম্পূর্ণভাবে তাহার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণের শিকার হইয়া থাকিলে, উক্ত কারণের মাত্রা;
(খ) কোন উদ্যোগে (enterprise) অর্থায়নের জন্য দেনাদার অর্থ গ্রহণ করিয়া থাকিলে, উক্ত উদ্যোগের সহিত সম্পৃক্ত ঝুঁকির মাত্রা;
(গ) দেনাদারের কার্যকলাপ, সত্বুদ্ধি-বিরোধী বা নৈতিকতা-বিরোধী কিনা৷
(৬) আদালত এমন কোন আপোষ-মিমাংসা বা পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা অনুমোদন করিবে না, যাহাতে ৭৫ ধারা অনুসারে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেনাসমূহ অন্যান্য দেনার তুলনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা নাই৷
(৭) অন্য যে কোন ক্ষেত্রে আদালত প্রস্তাবটি অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে৷
No comments:
Post a Comment